Wednesday, March 21, 2012

নাসার নভোচারী সুনীতা মুসলমান নন, গণেশ ভক্ত হিন্দু

বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী সেরা কিছু গুজবের মধ্যে অন্যতম হলো সুনীতা উইলিয়ামসের ইসলাম গ্রহণ। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় সংবাদপত্র দৈনিক কালের কণ্ঠ কোন প্রকার সত্যতা যাচাই না করেই এই সংবাদটি পরিবেশন করে গত 16 মার্চ তারিখে। সংবাদটি হুবহু এখানে তুলে ধরা হলোঃ

মুসলমান হওয়ার গল্প-১ :
নাসার নভোচারী সুনিতা এখন মুসলমান

২০০৬ সালের কথা। বরাবরের মতো মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা থেকে একটি নভোযান পাঠানো হলো। মহাকাশের খোঁজখবর সংগ্রহ করাই ছিল যে অভিযানের মূল উদ্দেশ্য। অন্য গবেষকদের সঙ্গে সে নভোযানে অবস্থান করছিলেন সুনিতা উইলিয়াম। মহাকাশ গবেষণাযানটি যখন পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে ২৪০ মাইল উপরে, হঠাৎ নিচের দিকে চোখ আটকে যায় সুনিতার। পৃথিবী পৃষ্ঠে তারার মতো দুটি আলো জ্বলতে দেখলেন তিনি। চিন্তায় পড়ে গেলেন সুনিতা; ভাবলেন, পৃথিবীপৃষ্ঠে তো এভাবে জ্বলে থাকার মতো কোনো আলোকশিখা থাকার কথা নয়। তবে এই আলোকরশ্মি দুটি কি?
সঙ্গীদের ডেকে দেখালেন এবং টেলিস্কোপের সাহায্যে আলো দুটিকে নির্ণয় করার চেষ্টা চালালেন। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো সুনিতার। আরো কাছে, আরো পরিষ্কারভাবে দেখলেন, আলো দুটির কেন্দ্রস্থল পৃথিবীর মক্কা ও মদিনা। মক্কা শহরের কেন্দ্রস্থল ও মদিনা শহরের কেন্দ্রস্থ থেকে মহাকাশমুখি এই আলোকরশ্মি দুটি বিকিরিত হচ্ছে।
মহাকাশ অঙ্গনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা সম্পর্কে সুনিতা উইলিয়াম নিজেই বলেছেন, 'আমি যখন পৃথিবী থেকে প্রায় ২৪০ মাইল উপরে উঠলাম, তখন পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠে দুটি তারা (আলো) দেখতে পেলাম। এর পর একটি টেলিস্কোপের মাধ্যমে আলো দুটি দেখার চেষ্টা করলে দেখি, একটি আলোর অবস্থান মক্কায় আর অন্যটি মদিনায়। এই দৃশ্য দেখার পর আমি প্রচণ্ডভাবে অভিভূত হই এবং তখনই ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিই। পরে ফিরে এসে ইসলাম গ্রহণ করি। আমি এখন একজন মসলমান।'

ইসলাম গ্রহণ করা নিয়ে শত জল্পনা-কল্পনার ইতি টেনে ওমরাহ পালন করতে আসা সুনিতা উইলিয়াম জেদ্দার হোটেল হিলটনে বসে এভাবেই ব্যক্ত করছিলেন তাঁর ইসলাম গ্রহণ করার কাহিনী। সাংবাদিকদের শোনাচ্ছিলেন তাঁর মুসলমান হওয়ার রোমাঞ্চকর গল্প। এ সময় তিনি ইসলাম গ্রহণ করার নেপথ্যে থাকা ঘটনা ব্যক্ত করার পাশাপাশি উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরও উত্তর দেন। নাসার প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক সুনিতার ইসলাম গ্রহণ করা বিষয়ে তাঁকে চেনেন বা জানেন এমন অনেকের মন্তব্য ছিল অনেকটাই এরকম- 'আর কারো পক্ষে সম্ভব হলেও সুনিতার পক্ষে এটা কখনো সম্ভব নয়।
কারণ সে ছিল ইসলাম বিদ্বেষী'। অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনা এবং সন্দেহ-কানাকানির ইতি টেনে গত রমজান মাসে ওমরাহ পালন করতে এসে নিজের মুসলমান হওয়ার ঘোষণা দিলেন সুনিতা উইলিয়াম এবং গর্ব করে বললেন, 'আমি এখন একজন মুসলমান, এটা ভাবতেই আমার ভালো লাগছে।'

ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনিতা উইলিয়াম ১৯৬৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ায়ো অঙ্গরাজ্যের 'ইউক্লিডে' জন্মগ্রহণ করেন। বাবা দীপক পাণ্ডে ও মা বনি পাণ্ডে উভয়ই ছিলেন ভারতীয় হিন্দু। ম্যাসাচুসেটস হাই স্কুলে পড়াশোনা করার পর ১৯৮৭ সালে ফিজিক্যাল সায়েন্সে বিএস ডিগ্রি এবং ১৯৯৫ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট ফ্লোরিডা ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে এমএস ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। এর আগে ১৯৮৯ সালে সুনিতা ন্যাভাল একাডেমীতে কমিশন লাভ করেন এবং ১৯৯৩ সালে ন্যাভাল এভিয়েটর হিসেবে পদোন্নতি অর্জন করেন। পরবর্তী সময়ে আমেরিকান হেলিকপ্টার ইনস্টিটিউটে টেস্ট পাইলট ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব পালনকালে ভূমধ্যসাগর, লোহিত সাগর, পারস্য ও আরবসাগরসহ মরুভূমি এলাকায় কাজ করেন। এর পর ১৯৯৮ সালে সুনিতা ফ্লোরিডাস্থ মার্কিন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসায় যোগদান করেন। কর্মরত অবস্থায়ই একজন ক্যাথলিক খৃস্টানকে বিয়ে করে সংসারজীবনে প্রবেশ করেন তিনি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে আরবের মরু এলাকায় কাজ করার সময় অল্প-বিস্তর ধারণা অর্জন করেন মুসলমানদের প্রকৃত জীবন সম্পর্কে। উল্লেখ্য, এর আগে ইসলাম সম্পর্কে সুনিতার বস্তুত কোনো ধারণা বা পড়াশোনা ছিল না।
নভোযান পরিচালনার ক্ষেত্রে খুব দক্ষ কর্মী ছিলেন সুনিতা উইলিয়াম। মহাকাশে গিয়ে রেকর্ড পরিমাণ সময় ১৯ ঘণ্টা ১৭ মিনিট স্পেস ওয়ার্ক করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসন্তান সুনিতা সেদিন সবার সামনে স্পষ্ট ভাষায় বলেন, 'আমি একজন মুসলমান। আমার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা নিয়ে এতদিন যে সন্দেহ চলে আসছিল, আজ তার অবসান হলো। বর্তমানে আমি একজন মুসলমানের মতোই জীবন যাপন করছি। আমার ইসলাম গ্রহণ করার ব্যাপারে আর কোনো বিভ্রান্তি ছড়ানোর উপায় নেই।

প্রতিবেদক: মিরাজ রহমান  (ইমেইল: mirajrahmanbd@gamil.com)

প্রকৃতপক্ষে এই প্রতিবেদন হচ্ছে ইন্টারনেট ভিত্তিক অপপ্রচারের ফসল। ইন্টারনেটে কি কি অপপ্রচার হচ্ছে সুনীতাকে ঘিরে? ইন্টারনেট ভিত্তিক মুসলমানদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যবহুল ওয়েবসাইট উইকিইসলাম ডটনেট  হতে এবিষয়ে হুবহু বিবরণটা এই রকমঃ

undefinedএকজন নারী নভোযাত্রী হিসেবে সুনীতা উইলিয়ামস সবচেয়ে দীর্ঘ সময় (195 দিন) মহাকাশে অবস্থানের রেকর্ডের অধিকারী। তাঁর বাবা ড. দীপক পাণ্ডে একজন হিন্দু, আর মা বনি পাণ্ডে একজন ক্যাথলিক। উইলিয়ামের উভয় ধর্মবিশ্বাসের প্রতিই শ্রদ্ধাবোধ আছে। তবে তিনি একজন গণেশ ভক্ত হিসেবেই পরিচিত।

বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ, ফোরাম এবং চেইন ইমেইল বা গণ-মুঠোবার্তায় প্রচারণায় দাবি জানানো হয়েছে যে সুনীতা উইলিয়ামস চাঁদ থেকে ফিরে এসে হিন্দু থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন
এখানে উদাহরণ স্বরূপ কিছু প্রচারিত দাবি তুলে ধরা হলো (ইংরেজি থেকে হুবহু অনূদিত):

গুজব-১
“সুনীতা উইলিয়ামস (প্রথম ভারতীয় নারী যিনি মহাশূন্য অভিযানে কয়েক মাস আগে গিয়েছিলেন) ইসলাম গ্রহণ করেছেন, মাশাল্লাহ। কারণ তারা যখন চাঁদে ছিলেন, তারা পৃথিবীর দিকে দেখলেন, পুরো পৃথিবীকেই কালো দেখাচ্ছিল, কিন্তু পৃথিবীর বুকে দুইটি জায়গা জ্বলজ্বল করছিল আর তারা(রশ্নি)র মতো দেখাচ্ছিল। তাঁরা তা দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন এবং দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে তা দেখলেন। তাঁরা জানতে পারলেন যে ওই দুটি জায়গা ছিল ‘মক্কা’ আর ‘মদিনা’ মাশাল্লাহ্। তখন তারা সিদ্ধান্ত নিলেন পৃথিবীতে ফিরে তারা ‘ইসলাম’ গ্রহণ করবেন। তাই আপনি একজন মুসলিম হিসেবে গর্ব করুন। আল্লাহ্ হাফিজ...!”

গুজব-২
“2/7/2007 তারিখে চাঁদে গমনকারী প্রথম ভারতীয় নারী সুনীতা উইলিয়ামস বলেছেন যে, চাঁদ থেকে পুরো পৃথিবীকে কালো আর অন্ধকার দেখাচ্ছিল, দুইটি জায়গা ছাড়া যা উজ্জ্বল আর রশ্মিময় ছিল, যখন তিনি দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে তা দেখছিলেন। এই জায়গা দুটি ছিল মক্কা আর মদিনা (সৌদি আরব)। আর এই চাঁদে সকল তরঙ্গই যখন নিষ্ক্রিয়, তবুও তিনি আযানের ধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন... শ’আল্লাহ্।”

গুজব-3
“মুসলমানদের জন্য উদ্দীপক সংবাদ... মহাশূন্যের অভিযাত্রী সুনীতা উইলিয়ামস ইসলাম গ্রহণ করেছেন। কারণ যখন তাঁরা মহাশূন্যে ছিলেন পুরো পৃথিবীকেই অন্ধকার দেখাচ্ছিল কিন্তু পৃথিবীর মাত্র দুটি জায়গা জ্বলজ্বল করছিল। টেলিস্কোপিক দৃষ্টিতে তারা জায়গাদুটিকে মক্কা এবং মদিনা বলে নির্দিষ্ট করেন; আর পৃথিবীতে পৌছে ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ্ সর্বশক্তিমান তাদেরকে নিরাপদে ফিরিয়ে এনেছেন। তাই সুবহানাল্লাহ, একজন মুসলিম হিসেবে গর্বিত হোন।”

গুজবের অযথার্থতাঃ
প্রথমত দৈনিক কালের কণ্ঠের প্রতিবেদন সম্পর্কে বলতে গেলে সত্যতা সেখানে নেই বললেই চলে। শুধুমাত্র সুনীতার ব্যক্তিগত তথ্যগুলি সত্য। ওমরাহ পালন বিষয়ে তথ্যগুলো পুরোটাই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কোন তথ্যসূত্র, দিন-তারিখ কিছুই উল্লেখ নেই। সুনীতার মা-বাবা উভয়কেই হিন্দু বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সুনীতার মা একজন ক্যাথলিক।
মহাকাশে গিয়ে রেকর্ড পরিমাণ সময় ১৯ ঘণ্টা ১৭ মিনিট স্পেস ওয়ার্ক করার কথা বলা হয়েছে, অথচ সুনীতা সেখানে 195 দিন অবস্থান করে কাজ করেছেন। আর সাংবাদিকদের কাছে তাঁর এই বক্তব্যের কোন প্রমাণ বা প্রকাশনা নেই। আসলে উক্ত প্রতিবেদনে ধর্ম প্রচারকরা নিজেদের কথাগুলো সুনীতার মুখ দিয়ে অত্যন্ত কৌশলে বলিয়ে নিচ্ছেন যা গতানুগতিক বাক্য গঠনশৈলী দেখেই বোঝা যায়।
সুনীতা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছিলেন, চাঁদে নয়। মানুষের সর্বশেষ চাঁদে অবতরণ হয়েছিল 1972 সালের 7 ডিসেম্বর (এপোলো 17)। আজ পর্যন্ত ইউজিন কারনেনই শেষ নভোযাত্রী যিনি চাঁদের বুকে হেটেছিলেন। আর চাঁদের বুকে বাতাসও নেই যে সেখানে আযান শোনা যাবে।
সুনীতা উইলিয়ামস প্রথম ভারতীয় নারী নভোযাত্রী নন। ইন্দো-আমোরিকান নভোযাত্রী কল্পনা চাওলা ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম নারী যিনি মহাশূন্য অভিযানে গিয়েছিলেন।

 গুজবগুলো দাবি করে, তাঁরা পৃথিবীতে ফিরে এসে ইসলাম গ্রহণundefined করবেন। প্রকৃতপক্ষে তাঁরা তা করেননি। বরং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাওয়ার সময় উইলিয়ামস তাঁর সঙ্গে এক কপি ভগবদ্ গীতা ও ভগবান গণেশের ছোট একটি মূর্তি নিয়ে গিয়েছিলেন। 2007 সালের 22 জুন পৃথিবীতে ফিরে তিনি ইসলাম গ্রহণ বিষয়ে কোন লক্ষণই প্রদর্শন করেননি। বস্তুত, তিনি বিশ্বাস করেন ভগবান গণেশ, আল্লাহ নয়, সবসময় তাঁর সহায় ছিলেন।

পৃথিবীতে অবতরণের প্রায় চার মাস পরে 15 অক্টোবর 2007 তারিখে ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকা ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকায় তাঁর সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “
Up in space, the Gita and Ganesha were what kept me grounded. They put life in perspective.”
তিনি মহাশূন্যে সঙ্গী হিসেবে ভগবান গণেশ আর ভগবদ গীতাকেই বেছে নিয়েছিলেন। এর পূর্বে তিনি এতটা গভীরভাবে কখনো
গীতা অধ্যয়ন করেননি। যদিও কৈশোর বয়সে তাঁর বাবা তাকে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী শুনিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “এটাকে মামুলি মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই তোমার প্রকৃত ভিত্তি। পৃথিবীর চারদিকে ঘূর্ণায়মান ছোট একটা নভোযান, তুমি অনেক কিছুই করছ, মাঝে মাঝে এটাকে কাজ বলেই মনে হয়, যা তুমি করছ... গণেশ, গীতা সত্যি সত্যিই তোমাকে যেন গৃহে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। অর্জুনের বিষাদ আর জিজ্ঞাসা বিষয়ে পড়তে গেলে রোমাঞ্চিত হতে হয়। আর এটাই তোমার জীবনকে গভীরতা প্রদান করে।”

Sunday, March 11, 2012

নারী নির্যাতনরামুতে সংখ্যালঘুকে নির্যাতন

রামুতে গৃহবধূকে এসআইর নির্যাতন : কক্সবাজারের রামুতে আসামিকে না পেয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক গৃহবধূকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে রামু থানার বিতর্কিত দারোগা (এসআই) রুহুল আমিন। তার বন্দুকের বাটের আঘাতে ওই গৃহবধূর বাম হাতের কনুইয়ের হাড় ভেঙে গেছে বলে জানা গেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদিকে এ ঘটনার খবর প্রকাশ করলে উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে জিডি করাসহ নানা ধরনের হুমকির ঘটনায় পুরো রামুতে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশরে বর্বর নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ বিপু বড়ুয়া রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের হাইটুপী গ্রামের রোজেন বড়ুয়ার স্ত্রী। গতকাল দুপুরে হাইটুপী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত গৃহবধূ বিপু বড়ুয়া জানান, দুপুরে তিনি ৬ বছরের সন্তানসহ ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন। এ সময় রামু থানার এসআই রুহুল আমিন ও তিনজন কনস্টেবল বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে তার স্বামী কোথায় জানতে চান। স্বামীর অনুপস্থিতির কথা জানাতেই এসআই রুহুল আমিন বিপু বড়ুয়াকে চুল ধরে মারধর ও পাশবিক নির্যাতন শুরু করে। পরে বন্দুকের বাঁট দিয়ে তাকে আঘাত করলে তার চিত্কারে শাশুড়ি কাজলী বড়ুয়া ও জা চুমকী বড়ুয়া এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। এ ব্যাপারে এসআই রুহুল আমিন মোবাইল ফোনে ওই গৃহবধূকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং এ ব্যাপারে অসত্য সংবাদ ছাপলে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জিডি করার হুমকি দেন। 

Tuesday, March 6, 2012

নাস্তিকরা ধর্মের শত্রু, ধার্মিকের শত্রু নয়।

একজন নাস্তিক হিসাবে আমার ধারণা হচ্ছে যে মানুষটি ধর্ম পালন করেন এই ভেবে যে, 'এটি সকলের মঙ্গলের জন্য ঈশ্বরের দ্বারা প্রচারিত' সেই আস্তিক আমার শত্রু নয়। শত্রু হল তারা যারা একজন সাধারণ মানুষের মনে 'চোখ বুজে বিশ্বাস করার অভ্যাস' ঢুকিয়ে দেয়। উদাহরণ হিসাবে বলতে পারি কোনো অশিক্ষিত বা অল্পশিক্ষিত যখন রোগের চিকিৎসা করাতে না গিয়ে আল্লার কাছে মাথা ঠোকে কিম্বা জ্বীন ছাড়ানোর জন্য পীরের কাছে দৌড়ায়, তাবিজ কবজ কেনে, সে কখনো নাস্তিকের শত্রু নয়। শত্রু হল তার ভুল বিশ্বাস, যা তাকে সঠিক পথ চিনতে বাধা দেয়। (এখানে কেউ যদি আল্লা আছেন বলে মেনেও নিয়ে থাকেন তাঁরা কি বলতে পারেন যে চিকিৎসা করায় ডাক্তারের চেয়ে আল্লা বেশি ওস্তাদ কিনা?) সেই সরল মানুষেরা একজন হাড়-হারামজাদাকে চোখ বুজে অনুসরণ করে কেবল এই ভেবে যে এনার মতন টুপি দাড়ি নামাজী কখনো খারাপ হতে পারে না। একজন উর্দু কি আরবি কপচানো চোট্টার কথায় বোকা বাঙ্গালীর ঘরে আগুন দেয়। কোনো নেতার যোগ্যতা নিয়ে না ভেবে তার টুপি কিম্বা দাড়ি দেখে তাকে ভোট দেয়। সেই সুযোগ নিয়ে আমাদের হাড়-হারামজাদারা কেবল মানুষের পকেট খালি করেই ছাড়ছে না, নেতা মন্ত্রী হবার পর্‍যন্ত স্বপ্ন দেখছে। এই অবস্থা পালটানো যেতে পারে কেবল 'চোখ বুজে বিশ্বাস' করা বন্ধ করে, প্রশ্ন করে, বিচার করে, ভুল সংশোধন করে। ধর্ম মানুষের এই বিচার করার স্বাভাবিক ক্ষমতাটাকেই নষ্ট করে দেয়। সেই কারণেই ধর্ম এবং তার ধ্বজাধারীরা যুক্তিবাদীর শত্রু। ধর্মকে তারা মানুষের বারোটা বাজানোর কাজে ব্যবহার করে, কিন্তু চোখ বুজে বিশ্বাস করার মহান আদর্শে শিক্ষিত জনতা তাদের পিছনে ভেড়ার পালের মতন ঘোরে। জনগনের কয়েক কোটি টাকা হজম করার পরে তারা কয়েক লাখ টাকা দিয়ে মসজিদ বানিয়ে দেয়। সেখানে পাব্লিক আল্লার কাছে নিজেদের উন্নতির জন্য দোয়া করে। চালের দাম কমানোর দোয়া করে। বাড়ির মেয়েটা যেন নিরাপদে বাড়ি ফিরে আসে সেজন্য দোয়া করে।

একবার ভাবুন তো, কেবল রাজধানী শহরে জুম্মার নামাজে কত লোক জড় হয়? এই লোকগুলা যদি সপ্তাহে একটা দিন সংসদ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে দাবী করে (দোয়া নয়) যে জিনিষের দাম কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে, মানুষের উন্নতির জন্য কাজ করতে হবে, পুলিশের কাজ ঠিকমতো করতে হবে, সমস্ত ঝুলে থাকা মামলার বিচার করতে হবে। সরকারের ক্ষমতা আছে সেই দাবী না মেনে বসে থাকার? কোনো দলের কোনো নেতার সাহস হবে সেই দাবীর বিরুদ্ধে কথা বলার? আমরা সবকিছু বদলে দিতে পারি, কিন্তু নিজেদের হাত লাগাতে হবে। পাকিস্তানকে গদাম সহ খেদানোর কাজটাও মানুষেই করেছিল। ঈশ্বরের ভরসায় থাকলে কিছুই হতনা।

কোনো নাস্তিক যদি বিশ্বাসীকে গালাগালি দিয়ে কিম্বা ধোলাই দিয়ে তার বিশ্বাস দূর করতে চায় তাহলে সে নাস্তিক হবার যোগ্য নয়। ধর্মগুলো বলে একজন অবিশ্বাসীকে নরকের আগুনে পোড়ানো হবে, সেই ধর্মের মতই নাস্তিকও যদি ভয় দেখিয়ে কাজ হাসিল করতে চায় তাহলে আর তার যুক্তিপ্রমাণ নিয়ে কাজ কি? ধোলাই দেওয়া দরকার সেইসব লোকেদের যারা মানুষের এই সরল বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তাদের মাথায় চড়ে বসে বা বসার চেষ্টা করে। সেই স্বার্থে চোখ বুজে বিশ্বাস করার মহত্ব প্রচার করে। এবং প্রশ্ন তুললেই ধর্ম গেল রে বলে লোক ক্ষ্যাপায়।

ঈশ্বর আছেন কি নাই সে ক্যাচাল পরে করলেও চলবে, কিন্তু এইসব হাড়-হারামজাদা ভন্ড-ধার্মিকেরা আছে এটা বাস্তব সত্যি। এরা যে মানুষের বারোটা বাজানোর জন্যই ধার্মিক সেটাও বাস্তব সত্যি। আগে এদের খেদানো দরকার।

মানিকগঞ্জে সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও মন্দিরে আ’লীগের ভাংচুর আগুন : খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার মুখে সাংবাদিকরা : প্রতিবাদ

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার উকিয়ারা বাজারে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা হামলা চালিয়ে একটি মন্দির ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ভাংচুর করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন বাংলাভিশন ও সমকালের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি বিপ্লব চক্রবর্তী ও এটিএন বাংলার সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ। এ ঘটনার পর থেকে সংখ্যালঘু পরিবারের লোকজন ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে তাত্ক্ষণিক মানিকগঞ্জে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তারা সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু তাহেরের অপসারণ দাবি করেছেন। সংখ্যালঘু পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ মালেক স্বপনের সমর্থকরা উকিয়ারা বাজার সংলগ্ন সংখ্যালঘু গোসাই মণ্ডল ও শরত্ মণ্ডলের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় ক্যাডার বাহিনীর শতাধিক সন্ত্রাসী প্রথমে একটি দুর্গা মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। এরপর ৪টি বসতঘর ও একটি দোকান ভেঙে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে সন্ত্রাসীরা ঘরের আসবাবপত্রসহ জিনিসপত্র পাশের নদীতে ফেলে দেয়। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় উকিয়ারা বাজারের সব দোকানপাট। সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা ভয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান। খবর পেয়ে বাংলাভিশন ও সমকালের মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি বিপ্লব চক্রবর্তী এবং এটিএন বাংলার আবুল কালাম আজাদ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ইসরাফিল হোসেনের নির্দেশে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক বিপ্লব চক্রবর্তীর ওপর হামলা চালিয়ে তার কাছ থেকে মোবাইল ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে একঘণ্টা আটকে রাখে। এ সময় এটিএন বাংলার সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ প্রাণভয়ে পালিয়ে যান। প্রায় ২ ঘণ্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে হাজির হয়। আহত সাংবাদিক বিপ্লব চক্রবর্তী জানান, সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িঘর ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার বিষয়টি সদর থানার ওসি আবু তাহের মিয়াকে জানানো হলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি তাত্ক্ষণিক ঘটনাস্থলে যাননি। ওসির অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে তাত্ক্ষণিকভাবে জেলায় কর্তব্যরত সাংবাদিকরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। সাংবাদিকরা মানিকগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেন। মিছিল নিয়ে সাংবাদিকরা প্রথমে জেলা প্রশাসক ও পরে পুলিশ সুপারের কাছে যান। জেলা প্রশাসক মুন্সী শাহাবুদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, এ হামলা দুঃখজনক। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, জমিটি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাড়িঘর কেউ উচ্ছেদ করতে পারে না। পুলিশ সুপার মাসুদ করিম সাংবাদিকের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, অভিযোগ দায়ের হওয়ামাত্র ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে মন্দির ও সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়িঘর ভাংচুর ও সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে জাতীয় হিন্দু মহাজোট মানিকগঞ্জ শাখা বিকালে মানিকগঞ্জ শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। হিন্দু-বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ মানিকগঞ্জ শাখা এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এছাড়া সাংবাদিকের ওপর হামলার প্রতিবাদে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।

Saturday, March 3, 2012

চট্টগ্রামের হাট হাজারীতে মন্দির ভাংচুর অত:পর মসজিদের দেয়াল ভাঙতে ৫০ টাকা দেওয়া হয় মিস্ত্রি জসিমকে

'বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে আমি ঘুমে ছিলাম। ঘুম থেকে ডেকে মসজিদের দেয়াল ভাঙতে বলে এমদাদ উল্লাহ ও লোকমান। পরে তাদের কথামতো মসজিদের বারান্দার দেয়াল ভাঙি। তারা আমাকে ৫০ টাকা দেয়।' গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারিক হাকিম মাসুদ পারভেজের খাস কামরায় হাটহাজারীর নন্দীরহাট এলাকার রাজমিস্ত্রি মোঃ জসিম ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা স্বীকার করেন। জবানবন্দিতে জসিম আরও বলেন, মসজিদ ভাঙতে রাজি না হলেও এমদাদ ও লোকমান তাকে বাধ্য করে। তাকে ৫০ টাকা দিয়ে বিষয়টি কাউকে না বলতেও নিষেধ করে। পরদিন মসজিদ ভাঙার গুজব ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোক চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কে ব্যারিকেড দেয় ও হাটহাজারীতে মন্দির পুড়িয়ে দেয়। হাটহাজারী সার্কেলের সিনিয়র এএসপি বাবুল আকতার সমকালকে জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লোকমান ও এমদাদসহ হিন্দু এবং মুসলিম উভয়পক্ষের লোকজন নিয়ে সমঝোতা বৈঠকের চেষ্টা চলছিল। ওই সময় লোকমান ও এমদাদের ছেলেরা লোকনাথ মন্দিরে হামলা ও ভাংচুর চালায়। সে ঘটনা ধামাচাপা দিতে একই দিন রাতে রাজমিস্ত্রি জসিমকে দিয়ে মসজিদের কিছু অংশ ভাঙা হয়। লোকমান ও এমদাদের পেছনে কারা ইন্ধনদাতা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের কোনো ইন্ধন আছে কি-না তারও তদন্ত চলছে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার ওসি (তদন্ত) অং সা তোয়াই সমকালকে বলেন, গ্রেফতার হওয়া ১০ জনের মধ্যে চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসবে। ইতিমধ্যে গ্রেফতার হওয়া জসিম মসজিদ ভাঙার কথা স্বীকার করেছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, নন্দীরহাট এলাকায় লোকনাথ মন্দিরে উৎসব উপলক্ষে গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুপুরে র‌্যালি বের করা হয়। এ সময় একই এলাকার হাজিপাড়া মসজিদের বাসিন্দারা নামাজ চলাকালে মাইক ছোট করে বাজানোর অনুরোধ করেন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে র‌্যালির পেছনে থাকা কে বা কারা মসজিদে ঢিল ছুড়ে মারলে কাচ ভাংচুর ও তিনজন মুসলি্ল আহত হন। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সন্ধ্যায় সমঝোতা বৈঠকের চেষ্টা চালায় প্রশাসন। এরই মধ্যে মন্দিরে ভাংচুর ও লুটপাট চালায় কে বা কারা। ১০ জন কারাগারে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া ১০ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারিক হাকিম বেগম ইয়াসমিন আরা এ নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে চার জনের রিমান্ড আবেদনের শুনানির দিন ধার্য্য করেন ২২ ফেব্রুয়ারি। জানা গেছে, তদন্ত কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার ওসি অং সা তোয়াই গ্রেফতার হওয়া ১০ আসামির মধ্যে চার জনের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। গত বুধবার রাতে এএসপি বাবুল আকতারের নেতৃত্বে হাটহাজারীর নন্দিরহাট হাজিপাড়া থেকে রাজমিস্ত্রি জসিমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী নয় জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন_ এমদাদুল্লাহ, মোঃ লোকমান, মোঃ আবদুল করিম, মোঃ ফরিদ, মোঃ মনজুর আলম, মোঃ শাফি, মোঃ আবু তাহের, মোঃ ওসমান ও হাজী মোঃ বাদশা।

সমকাল, ফিরোজ শিবলী, চট্টগ্রাম ব্যুরো ১৭/১২/২০১২

সংখ্যালঘু ৩৫ পরিবার নিরাপত্তাহীনতায়

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ধলিবিলা গ্রামে প্রতিমায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় করা মামলার বাদীকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে আসামিরা। এতে মন্দির-সংলগ্ন হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩৫টি পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রের বিবরণ অনুযায়ী, তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে গত সোমবার গভীর রাতে সার্বজনীন হরিমন্দিরে প্রতিমায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় মন্দিরের পার্শ্ববর্তী একটি পোলট্রি খামার ও খড়ের গাদায়ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারা দিবা ও সহকারী পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) রবিউল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে লোহাগাড়া হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মন্দির কমিটির সভাপতিকে প্রতিমা সংস্কারের জন্য ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি সমীরন দত্ত বাদী হয়ে তিনজনকে আসামি করে লোহাগাড়া থানায় মামলা করেন। আসামিরা হলেন মো. আলমগীর, মো. ফয়সাল ও সিরাজুল ইসলাম। পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করলেও জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা বাদীসহ সংখ্যালঘু ৩৫ পরিবারকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এ ব্যাপারে আবারও জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। ওই গ্রামের বাসিন্দা সুধীর চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘আসামিরা কয়েক দিন ধরে আমাদের নানা রকম ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।’ অগ্নিসংযোগের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লোহাগাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহাজালাল জানান, স্থানীয় সুমন দাশের সঙ্গে আসামিদের আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করে প্রতিমাসহ অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করা হয়। পুলিশ এরই মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করলেও তারা জামিনে ছাড়া পায়।
প্রথম আলো, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি | তারিখ: ০৪-০৩-২০১২